প্রেগন্যান্ট
=======================
বাজার থেকে ফিরতেই স্বামীকে বড় এক কাপ চা দিয়েই ঘরের একদম কোনায় চলে গেল স্ত্রী। বউয়ের এ রকম আচরণ দেখে স্বামী জিজ্ঞেস করল, কী হল?
স্ত্রী বলল, ভাবছি, তোমাকে একটা কথা বলব... মারবে না তো?
--- মারব কেন? বলো...
স্ত্রী ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে বলল, আমি না... প্রেগন্যান্ট।
--- বাহ্, এ তো খুব ভাল কথা।
আশ্বস্ত হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে স্ত্রী বলল, না, আসলে আমি যখন ইলেভেন-টুয়েলভে পড়তাম, তখন না... তিন-চার বার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলাম। শুনে বাবা খুব মেরেছিল... তাই বলছিলাম...
চোখ তুলে স্ত্রী দেখে তাঁর স্বামী মেঝেয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
আম
=======================
টিনের চালে শব্দ শুনেই রাঘব বুঝতে পারল আম পড়েছে।
বাড়িতে একটাই আম গাছ। প্রচুর আম হয়। ছোট্ট ছোট্ট। কিন্তু খুব মিষ্টি। সামান্য হাওয়া দিলেই টুপটাপ ঝরে পড়ে।
গত বছর পর্যন্ত বাড়িওয়ালা বেঁচে ছিলেন। তখন আম পড়লে দু'-চারটে রাঘবকেও দিতেন। কিন্তু তাঁর ছেলে যা পায়, হয় নিজে খায়, না হয় শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়।
কোথায় যেন চাকরি করে! সন্ধেবেলায় যায়। মধ্যরাতে আসে।
সে দিন মাঝরাতে আম পড়ার শব্দ শুনে রাঘব ঝপ করে বেরিয়ে আম কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল।
সক্কালবেলায় বাড়িওয়ালার ছেলে বলেছিল, হ্যাঁ রে, তোর বউদি বলল কাল রাতে নাকি আম পড়েছিল? তুই তুলেছিস?
রাঘব বলল, হ্যাঁ।
--- এর পর থেকে আম পেলে আগে আমার কাছে নিয়ে আসবি, বুঝেছিস?
তার পর থেকে ও আর আম কুড়োয়নি। আজ টিনের চালে পর পর বেশ কয়েকবার শব্দ হতেই ও আর শুয়ে থাকতে পারল না। ঘর থেকে বেরিয়ে যে ক'টি আম পড়েছিল ও কুড়িয়ে নিল। ঘরের দিকে আসছিল হঠাৎ মনে পড়তেই...
সোজা বাড়িওয়ালার ছেলের ঘরের দরজা ঠক ঠক করতে লাগল। তখন রাত দেড়টা-দুটো হবে। চোখ ডলতে ডলতে বাড়িওয়ালার ছেলে বেরিয়ে এসে বলল, কী হয়েছে?
হাতের আম দেখিয়ে রাঘব বলল, এই যে আম... সে আমটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
দশ পনেরো মিনিটও হয়নি, রাঘব খাটে ওঠা মাত্রই আবার টিনের চালে শব্দ।
সেটা নিয়ে আবার বাড়িওয়ালার ছেলের ঘরের দরজায় ঠক ঠক ঠক ঠক, এই যে আম... আমটা নিয়ে সে ঘরে চলে গেল।
আবার আম পড়ার শব্দ। আবার তার ঘরের দরজায় ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক--- এই যে আম...
আজ বুঝি হাওয়াটা একটু বেশিই দিচ্ছে। ঘনঘন আম পড়ছে। টিনের চালে শব্দ হচ্ছে। রাঘব গিয়ে আম কুড়োচ্ছে। আর ওই ঘরের দরজায়--- ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক... এই যে আম...
এ বার বলতেই, সে এত রেগে গেল যে, বিরক্ত হয়ে বলল, যত বার আম পড়বে তত বারই তুই আম কুড়িয়ে নিয়ে আসবি নাকি! এর পরে যদি আম পড়ে তুই আর এখানে নিয়ে আসবি না। যা পাবি, তুই নিয়ে নিস, বুঝেছিস? দাঁড়া... বলেই, রাঘবের কাছ থেকে এতক্ষণ যে আমগুলো সে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো ঘর থেকে এনে ওর দিকে এগিয়ে দিল।
চ্যালেঞ্জ
=======================
রিম্পি বলল, দেখবি, আমি বাইকে ওঠার এক মিনিটের মধ্যেই ও শুধু আমাকে নয়, স্কুটার ফেলে পালাবে, চ্যালেঞ্জ।
বন্ধুরা অবাক। সে কী করে সম্ভব! যে ছেলেটা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইক নিয়ে এই বাসস্ট্যান্ড ওই বাসস্ট্যান্ডে ঢু মারে এবং রাস্তায় কোনও মেয়েকে একা একা হেঁটে যেতে দেখলেই গাড়ি স্লো করে জিজ্ঞেস করে, কোন দিকে যাবে?
আর কোনও মেয়ে তার বাইকে উঠলেই সে এমন স্পিডে চালায় যে, পড়ে যাওয়ার ভয়ে মেয়েরা আচমকা তাকে পিছন দিক থেকে দু'হাতে জাপটে ধরে। যে মেয়েদের ভয়ডর কম, বুঝতে পারলেই ও এমন অসভ্যের মতো ব্রেক মারবে যে, যে কোনও মেয়েই মনে মনে বলবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
সেই ছেলে কিনা রিম্পির মতো এমন একটা চোখ ধাঁধানো মেয়েকে পেয়েও এক মিনিটের মধ্যে ছেড়ে পালাবে? হতেই পারে না।
ওরা চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করে নিল। পাঁচশো টাকা বাজি।
রিম্পি শুধু বলল, আমি ওর বাইক ওঠার পরে তোদের মধ্যে থেকে কেউ শুধু আমাকে একটা ফোন করবি, ব্যস।
ওরা তাইই করল। রিম্পি ওই ছেলেটার বাইকে ওঠা মাত্রই ওদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে ওর মোবাইলে ফোন করল।
বাইকটা স্টার্ট করতে যাচ্ছিল, কিন্তু ফোনটা বাজতেই ছেলেটার উদ্দেশ্যে রিম্পি বলল, দাঁড়ান, দাঁড়ান, দাঁড়ান... মা ফোন করেছে। বলেই, ফোনটা কানে ধরে বলল--- মা, আমি এখন বাড়ি যেতে পারব না। আমি চাই না আমার জন্য বাড়ির কেউ বিপদে পড়ুক। তুমি ব্যতিব্যস্ত হও। অ্যাঁ, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার রিপোর্টটা এনেছি। রিপোর্টে কোভিড পজিটিভ...
ছেলেটা এতক্ষণ কান খাড়া করে মেয়েটার কথা শুনছিল, কিন্তু যেই শুনল, কোভিড পজিটিভ... অমনি লাফ দিয়ে নেমেই দে ছুট।

কলার খোসা
=======================
রাস্তায় মুখোমুখি দেখা হতেই ব্যাঙ্কের লোকটা আকাশকে বললেন, শুনেছেন নির্মল চ্যাটার্জি মারা গেছেন?
--- না তো, কবে?
--- গতকাল।
--- কী হয়েছিল?
--- রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কলার খোসায় পা পিছলে সোজা লরির তলায়...
আকাশ থ'। নির্মল তার ছোটবেলার বন্ধু। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য এডুকেশন লোন নিয়েছিল।
ভেবেছিল, ছেলের চাকরি হলে দেবে। ছেলের চাকরি তো দূরের কথা, লকডাউনে তারই চাকরি চলে গেছে। ফলে কোনও কিস্তিই দিতে পারেনি। ব্যাঙ্ক থেকে বহু বার ফোন করেছে। শেষে উকিলের চিঠি। লিখেছে, সাত দিনের মধ্যে দেখা করতে।
একা যাওয়ার সাহস পায়নি। আকাশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাঙ্কের এই লোকটা টাকা শোধ করার জন্য এমন ভাবে চাপ দিচ্ছিল যে, কোনও উপায় না দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু গলায় নির্মল তাঁকে বলেছিল--- লোনের সময় যে অ্যাকাউন্টটা খুলেছিলাম, তার সঙ্গে আমার একটা জীবন বীমা করা ছিল। প্রতি বছর একশো টাকা করে কাটে। আচ্ছা, আমি যদি এর মধ্যে মারা যাই, তা হলে কি ওই দু'লক্ষ টাকা এই টাকা থেকে মাইনাস হয়ে যাবে?
ইনি বলেছিলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু হলে হবে না। একমাত্র অ্যাক্সিডেন্টাল কেসের ক্ষেত্রেই ওই টাকা পাওয়া যায়।
ফেরার সময় আকাশের পাশে হাঁটতে হাঁটতে স্বগতোক্তির মতো বিড়বিড় করে নির্মল বলেছিল, তার মানে গলায় দড়ি দিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে অথবা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরলে টাকা পাওয়া যাবে না, না!
তার পরে লকডাউন উঠতেই এই ঘটনা! তা হলে কি... ওখানে সত্যিই কলার খোসা পড়ে ছিল, নাকি ও পকেটে করে নিয়ে গিয়েছিল!
দুয়ারে বাংলা
=======================
দুয়ারে বাংলা। কথাটা শুনেই চাকরিসূত্রে বিহারে যাওয়া ছেলেটি নিজের রাজ্যে ফেরার জন্য একেবারে ছটফট করতে লাগল। অবশেষে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এই লকডাউনের মধ্যেই সে কোনও রকমে কলকাতায় এসে পৌঁছল।
এ রকম একটি রাজ্য থাকতে ও সব জায়গায় কেউ যায়! এখানকার সরকার কী সুন্দর নিজেই উদ্যোগী হয়ে পাড়ার ক্লাবগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেকের দুয়ারে দুয়ারে ফ্রি-তেই পৌঁছে দিচ্ছে রেশন, ত্রাণের টাকা, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মারফত চিকিৎসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা।
তাও, এগুলো না হয় ঠিক আছে। বিহারেও লকডাউনে এই ধরনের কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। তা বলে একেবারে দুয়ারে বাংলা! ভাবা যায় না...
তাই পাশের একজনকে খুব সাবধানে চুপিচুপি সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা দাদা, দুয়ারে বাংলা মানে কি শুধু বাংলাই? ইংলিশ দেয় না, না?
আমি কোনও দিন সেকেন্ড হইনি
=======================
অশোককে দেখলে বোঝা যেত না, ও এত ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু ওর অফিসের অমরদার ছেলে এইট্টি সিক্স পারসেন্ট নাম্বার পাওয়ার পরেও যখন অশোক বলেছিল, তোর ছেলেকে একটু মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বল, রেজাল্ট ভাল না হলে কিন্তু খুব মুশকিল। চাকরিবাকরির অবস্থা যা...
অফিসের সবাই যখন তাঁর ছেলের রেজাল্ট শুনে ধন্য ধন্য করছে, তখন এ কে রে বাবা, এই ধরনের কথা বলছে!
অমরদা একটু ক্ষুণ্ণ হয়েই বলেছিলেন, আমার ছেলে এইট্টি সিক্স পার্সেন্ট নাম্বার পাওয়ার পরেও তুই এ কথা বলছিস? তুই কত নম্বর পেতিস?
অশোক সে দিনই প্রথম বলেছিল, আমি কোনও দিন সেকেন্ড হইনি।
মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা অফিসে হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছিল ওর এই কথা। 'আমি কোনও দিন সেকেন্ড হয়নি' মানে ও নিশ্চয়ই সব ক্লাসেই ফার্স্ট হতো! তা হলে কি ও মাধ্যমিকেও ফার্স্ট হয়েছিল! উচ্চমাধ্যমিকেও! ফার্স্ট হয়েছিল বিএ, এম এ-তেও?
কোন ইয়ারে? ওকে যারা পছন্দ করত না, অফিসের সেই বন্ধুরা মিলে জোগাড় করেছিল ও কোন বছরে মাধ্যমিক দিয়েছিল।
জানার পরেই, ওরা কয়েক জন মিলে গুগল খুলে বসেছিল। সেই বছর, তার পরের বছর, তার পরের বছর, তার পরের বছরগুলোতেও যখন মাধ্যমিকে ফার্স্ট হওয়ার তালিকায় ওর নাম খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন যে বছরটি ওরা জেনেছিল, সেই বছরের আগের বছরগুলো দেখা শুরু করল। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেল প্রাগৈতিহাসিক যুগে। কিন্তু না, ফার্স্টের তালিকায় ওর নাম কোত্থাও নেই।
এটা জানার পরের দিনই, অশোক অফিসে ঢোকামাত্রই ওরা সবাই মিলে ওকে ঘিরে ধরল--- তুই যে সে দিন বললি, তুই কোনও দিন সেকেন্ড হোসনি, মানে ফার্স্ট হতিস, তা, তুই কোন সালে মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়েছিলি?
--- আমি? ফার্স্ট? আমি তো আজ পর্যন্ত কোনও পরীক্ষায় ফার্স্ট হইনি!
---- সে কী রে, এই তো সে দিন তুই বললি, আমি কোনও দিন সেকেন্ড হইনি।
--- হ্যাঁ, আমি তো মিথ্যে বলিনি। আমি তো এখনও বলছি, আমি কোনও দিনই সেকেন্ড হইনি। সেকেন্ড কেন? থার্ড, ফোর্থ, ফিফথ... কিছুই হইনি। ক্লাস ওয়ান থেকে প্রত্যেকটি পরীক্ষাতেই আমি কোনও রকমে টায়েটুয়ে পাশ করেছি। কোনও দিন সেকেন্ড হইনি।

আবাহন
=======================
খুব ভয়ে ভয়ে আছে আবাহন। কখন কী হয় কিচ্ছু বলা যায় না। কাগজ খুললেই মৃত্যু। টিভি খুললেই মৃত্যু। ফেসবুক খুললেই মৃত্যু।
হয় গলা ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, জ্বর। নয় মুখে স্বাদ নেই। নাকে গন্ধ নেই। এগুলো হলেই ব্যস, হয়ে গেল।
এক বন্ধু বলেছিল, তুই এত মদ খাস, এ রোগ তোকে ছুঁতেও পারবে না। কিন্তু তবুও... বাজার থেকে ফিরেই সোজা স্নানঘরে ঢোকে। জামাকাপড় ছাড়ে। সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করে। শেষে ডেটল জলে। ঘরে ঢোকার আগে খুব ভাল করে হাতে-পায়ে সেনিটাইজার স্প্রে করে।
কিন্তু যেই মুহূর্তে রাজ্য সরকার লকডাউন ঘোষণা করল, না, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নয়, এটিএম থেকে কুড়ি হাজার টাকা তুলে তড়িঘড়ি ছুটল মদের দোকানে।
সে যে কী ভিড় কহতব্য নয়। বিশাল লাইন। একশো চুয়ান্ন জনের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে, ধাক্কাধাক্কি করে যখন সে মদের বোতল হাতে পেল তখন সূর্য ঢলে পড়েছে।
শেষ পর্যন্ত এতগুলো বোতল আনতে পারার আনন্দে সে যখন জামাকাপড় ছাড়া, হাত পা ধোয়া, সেনিটাইজার দেওয়া বেমালুম ভুলে গিয়ে সেলিব্রেশনের মুডে তড়িঘড়ি বোতল সাজিয়ে বসল। প্রথম চুমুক দিতেই সে চমকে উঠল। এ কী! না আছে কোনও গন্ধ। না আছে কোনও স্বাদ।
নার্সিংহোম
=======================
নার্সিংহোম থেকে ফোনে যা বলল, সেটা শুনে তাপসের দিদি পাথর হয়ে গেল।
এই তো বেলা দশটা নাগাদ তার ভাই ফোন করেছিল। বলেছিল, দিদি যে ভাবে পারিস তুই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা। আমাকে বাঁচা। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
ভিডিও কলে ভাইয়ের এই আকুতি শুনে চমকে উঠেছিল দিদি। সামান্য মাথা যন্ত্রণা করছিল। মেডিক্লেম করা আছে। কার্ডের মেয়াদও ফুরিয়ে যেতে আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই ভর্তি হয়েছিল শহরের দ্বিতীয় নামজাদা হাসপাতালে।
ভর্তির দু'দিন পরেই হাসপাতাল থেকে দিদিকে জানানো হলো, ওর করোনা হয়েছে। করোনা! তা হলে কি নার্সিংহোম থেকেই সংক্রমিত হল! নাকি মাথা যন্ত্রণাটা ছিল প্রাথমিক উপসর্গ! প্রাথমিক উপসর্গই যদি হয়ে থাকে, তা হলে এই তিন দিনে ওরা কী চিকিৎসা করল!
তবু সাহস জোগানোর জন্য ভাইকে বলেছিল, ভয় পাস না। প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে করোনা ঠিক সেরে যায়...
--- আমার করোনা হয়নি রে, এখানে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের কারওরই করোনা হয়নি। কিন্তু যারা ভর্তি হচ্ছে, দু-একদিন পরেই তাদের করোনা হয়েছে বলে একটা আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
দিদি অবাক হয়ে বলল, এতে ওদের লাভ কী?
--- লাভ নেই মানে? মাথা যন্ত্রণা, হাঁটুতে ব্যথা বা অন্য যে কোনও রোগের চিকিৎসার যে খরচ, তার থেকে অনেক অনেক বেশি গুণ খরচ করোনার চিকিৎসায়। তাই ওরা সবাইকেই করোনা হয়েছে বলে প্রচুর প্রচুর টাকার বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। আমার তো মেডিক্লেম আড়াই লাখ টাকা ছিল, এই তিন দিনেই কি সব শেষ হয়ে গেল?
--- হ্যাঁ, ওরা তো আমাকে ফোন করেছিল। বলল, এ ক'দিনে বিল হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। মেডিক্লেম থেকে পাওয়া যাবে আড়াই লাখ টাকা। আপনারা বিকেল চারটের মধ্যে ব্যালেন্স এক লাখ আর অ্যাডভান্স আরও পাঁচ লক্ষ টাকা হসপিটালে জমা করে দিন।
--- তোকে পাঁচ লাখ টাকা বলেছে? কাউকে কাউকে তো আট-দশ লাখ টাকা বলছে। বলছে, না হলে রোগীকে নিয়ে যান। কিন্তু কেউ নিতে আসার আগেই ওরা রোগীকে মেরে দিচ্ছে।
--- কেন তাদের লাভ কী?
--- লাভ একটাই। এখান থেকে বেরিয়ে কেউ যদি অন্য জায়গায় করোনা টেস্ট করায়, তা হলে তো এরা ধরা পড়ে যাবে, তাই...
তাপসের দিদির গলা থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল--- ভাইয়ের কথাই সত্যি হল!
১৮ ইঞ্চি টিভি
=======================
ক্যুরিয়ারের ছেলেটা ঢাউস ঢাউস দুটো প্যাকেট নিয়ে আসতেই উৎফুল্ল হয়ে উঠল নবীন।
লকডাউনের আগে প্রচুর মাল প্রোডাক্ট হলেও লকডাউনের জন্য সেগুলো আর বিক্রি হয়নি। তাই গোডাউন ফাঁকা করার জন্য সেই কোম্পানিটি বিজ্ঞাপন করেছিল, বারোশো টাকায় তাঁরা টিভি দেবে।
বারোশো টাকায় টিভি! যত ছোটই হোক না কেন, এর চেয়ে সস্তা আর কিছু হতে পারে না। থাকুক না বাড়িতে বাহান্ন ইঞ্চি টিভি। তাতে কি! না-হয় বাথরুমেই রাখব।
কিন্তু এটা চলবে তো! বিজ্ঞাপনে দেওয়া নাম্বারে ফোন করেছিল নবীন। ও প্রান্ত থেকে বলেছিল, চলবে না মানে? অবশ্যই চলবে। না চললে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত।
তাই আর কালবিলম্ব করেনি সে। একটা নয়, একসঙ্গে দু'-দুটো অর্ডার করে দিয়েছিল। সেই টিভি কুরিয়ারের মাধ্যমে এখন তার দোরগোড়ায়।
আর তর সইছিল না তার। সই করে প্যাকেট দুটো নিয়ে ঘরে ঢুকেই তাড়াতাড়ি খুলতে শুরু করেছিল একটার মোড়ক।
এত যত্ন করে পাঠিয়েছে! খুলছে তো খুলছেই। মোড়ক আর শেষ হয় না। সেফটির জন্য এত থার্মোকল দিয়েছে যে, খুলতে খুলতে পাশে স্তুপাকৃতি হয়ে গেছে। তবু মোড়কের যেন আর শেষ নেই।
শেষ পর্যন্ত খোলসের ভেতর থেকে যখন টিভিটি বেরিয়ে এল তখন দেখা গেল সেটা খুব বেশি হলে ১৮ ইঞ্চি টিভি। এলইডি টিভির চেয়েও পাতলা।
কিন্তু সুইচ-টুইচ তো কিছুই নেই! চলবে কী করে! দেখে মনে হচ্ছে, একটা অ্যাক্রেলিক শিটের ওপরে সাঁটানো রয়েছে টিভির ছবি আঁকা ভিনাইল স্টিকার।
যখন সে হাতে নিয়ে ওটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভাল করে দেখছে, তখনই তার চোখে পড়ল সেটার একেবারে নীচে ছোট ছোট চারটি চাকা। আর সেখানে একদম গুড়িগুড়ি অক্ষরে লেখা--- ঠেললেই চলবে। না চললে ফেরত।

ফোন কল
=======================
স্বামী-স্ত্রী রাত্রিবেলায় খেতে বসেছেন। দু'জনেরই মোবাইল টেবিলের উপরে। তখনও তাঁদের খাওয়া অর্ধেকও হয়নি। ঘনঘন রিং বাজতে লাগল স্বামীর মোবাইলে।
এই সময় রোজই তাঁর ফোন আসে। আজকে দেরি করে খেতে বসেছে দেখে। না হলে এই সময় ও শোওয়ার ঘরেই থাকে। এদিককার টুকিটাকি কাজ সেরে যতক্ষণ না বউ ওই ঘরে যাচ্ছে ততক্ষণ ও কথা বলে যায়।
বউও জানে কার ফোন। তাঁর স্বামী একদিন তাকে বাড়িতেও নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর স্বামী ফোন ধরছে না দেখে এর মধ্যে কবে যেন ওই মেয়েটি তাঁকে ফোনও করেছিল।
বউ বুঝতে পারল, সে সামনে বসে আছে বলেই তাঁর স্বামী ফোনটা ধরছে না। ফোনটা ননস্টপ বেজে যাচ্ছে।
না, এ বার আর স্বামীর নয়, বেজে ওঠল তার ফোন। বউয়ের ফোনে রিং হতেই তাঁর স্বামী তড়িঘড়ি করে বলল, কেউ যদি আমার খোঁজ করে বলবে বাড়িতে নেই।
বউ কলটি ধরেই বলল, আমার স্বামী বাড়িতে আছে। বলেই, লাইনটি কেটে দিল।
স্বামী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, তোমাকে বললাম না, বলে দিও আমি বাড়িতে নেই?
বউ তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা তোমার ফোন নয়, আমার।
পরিযায়ী
=======================
বউ আর ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দলছুট এক পরিযায়ী শ্রমিক হাঁটতে হাঁটতে রাজ্যের সীমানার কাছে আসতেই, হইহই করে তেড়ে এল জনাকতক পুলিশ--- এই, দাঁড়া দাঁড়া দাঁড়া, যাচ্ছিস কোথায়?
শ্রমিকটি বলল, গ্রামে যাব বাবু।
--- কত দূরে?
--- এই তো সামনেই, আর সত্তর-বাহাত্তর মাইল হবে...
--- স... ত্ত... র... বা... হা... ত্ত... র... মা... ই... ল!
--- হ্যাঁ, একশো তিরিশ মাইলের মতো তো হেঁটে এলাম...
--- জানিস না, এখন লকডাউন চলছে?
পাশ থেকে অন্য এক পুলিশ বলে উঠল, ছেড়ে দে, ছেড়ে দে, দেখছিস না কোলে বাচ্চা আছে! হয়তো খিদে পেয়েছে...
শ্রমিকটি বলল, না বাবু, না। ওর খিদে পায়নি। ও তো খিদের জ্বালায় অনেকক্ষণ আগেই মরে গেছে।
ফেসবুক ফ্রেন্ড
=======================
'আগামী শুক্র, শনি, রবি আমি পুরুলিয়ায় থাকছি। আমার যে সব বন্ধুদের গাড়ি আছে, তাঁরা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।'
লেখাটি ফেসবুকে পোস্ট করেই কৃষ্ণাকে ফোন করল রেহান--- শোনো, আর কোনও চিন্তা নেই। আশা করি, ওখানে ঘুরাঘুরির জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে।
এর আগে একবার গয়ায় গিয়েছিল রেহান। উঠেছিল ভারত সেবাশ্রম সংঘে। সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় বুদ্ধগয়া দেখানোর জন্য।
সেখানে বৌদ্ধ মন্দির দেখতে গিয়ে ও চিনতে পারে তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে। পরিচয় দিতেই তিনি জানান, তিনি তাঁর পাড়ার লোকেদের টুরিস্ট বাসে করে বেড়াতে নিয়ে এসেছেন।
তার সঙ্গে তিনি আরও জানান, আজই তাঁরা এখানে এসেছেন। তাঁর ট্যুরে আর কোন কোন দর্শনীয় স্থান রয়েছে কথায় কথায় সেই তালিকাটিও বলেন।
তার সঙ্গে এও বলেন যে, আমাদের বাসে তো বাহান্নটা সিট। বুক হয়েছে মাত্র আটচল্লিশটা। চারটে সিট ফাঁকা। ইচ্ছে করলে আপনি আমাদের সঙ্গী হতে পারেন।
কোথায় কোথায় যাবে, কোন রুট ধরে কলকাতায় ফিরবে, সব জানার পরে রেহান জিজ্ঞেস করেছিল আমি যদি আজ থেকেই আপনাদের সঙ্গী হই, তা হলে আমাকে কত দিতে হবে?
তিনি বলেছিলেন, এ কী বলছেন? আপনি আমার এত বছরের ফেসবুক ফ্রেন্ড। আমি কি আপনার কাছ থেকে টাকা দিতে পারি? আর আমার তো সিট খালিই আছে। খেতে আর কত টাকা লাগে? চলুন, কিছু লাগবে না।
সে বার সেই ট্যুরের জন্য ও যে টাকা নিয়ে গিয়েছিল, তার এইট্টি পারসেন্ট টাকাই বাড়ি নিয়ে ফিরতে পেড়েছিল।
তার পর থেকেই ও যেখানেই যায়, তার অন্তত বেশ কয়েক দিন আগেই ফেসবুকে পোস্ট করে, সেখানে ওর কোন কোন বন্ধু আছে।
বন্ধু পেলে ওর আর কোনও চিন্তাই নেই। এখানে কী কী দেখার আছে? তিনি বড় মুখ করে বলা মাত্রই, তাঁকে ঝপ করে বলে ফেলা আমি তো এখানকার কিছুই চিনি না। তুমি কি আমাকে একটু নিয়ে যাবে? কথাটা এমন ভাবে বলা, যাতে সে রাজি হতে বাধ্য হয়। আর রাজি হলেই সেই জায়গায় যাতায়াতে সমস্ত খরচে তাঁর।
এখানকার বিখ্যাত খাবার কী? কৌশল করে একবার জেনে নিলেই হল, যে ক'দিন থাকবে সে ক'দিনই তাঁর ঘাড় ভেঙে ওই সব খাওয়া।
এখানকার ঐতিহ্য কী? কৃষ্ণনগর হলে পোড়া মাটির পুতুল, বাঁকুড়া হলে ডোকরার কাজ আর আসাম হলে সেখানকার চা পাতা। যেটার জন্য যে জায়গাটি প্রসিদ্ধ, সেখানকার সেই জিনিসই তাঁর কাছ থেকে অতি কৌশলে উপহার হিসেবে আদায় করে নেওয়া।
ক'দিন আগে কৃষ্ণা যখন বলল, পুরুলিয়ায় তিন দিনের লিটিল ম্যাগাজিন মেলা হচ্ছে। থাকা-খাওয়া ওরাই দেবে। চলো না... এই সুযোগে একটা ছোট্ট ট্যুরও হয়ে যাবে।
ট্যুর মানেই তো ঘোরাঘুরি। ওখানে তো অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী পাহাড়--- কত কী দেখার আছে! যতই বাস-অটো, টেকার থাক, ও সব করে কি ঘোরা যায়!
তখনই ফেসবুকে বড় বড় করে ও লিখে দিয়েছিল--- আগামী শুক্র, শনি, রবি আমি পুরুলিয়ায় থাকছি। আমার যে সব বন্ধুদের গাড়ি আছে, তারা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।
করেছিল। একজনই যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার গাড়ি আছে। আপনি কোন ট্রেনে আসছেন, কখন নামছেন, একটু জানাবেন। আমি গাড়ি নিয়ে স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করব। যে ক'দিন আপনি থাকবেন গাড়িটি আপনার জন্য বরাদ্দ থাকবে।
ট্রেনে থাকাকালীনই ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন আপনার জন্য আমি স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছি। সেই মতো স্টেশন চত্বর থেকে বেরোতেই রেহানের সামনে এসে যিনি দাঁড়ালেন, তাঁর বেশভূষা দেখে ও চমকে উঠল। পরনে লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি, কাঁধে গামছা। উনি বললেন, চলুন। ওই যে গাড়ি।
আঙুল তুলে উনি যেটা দেখালেন, রেহান সেটার দিকে তাকিয়ে দেখল, গাড়ি ঠিকই, তবে সেটা চার চাকার নয়, দু'চাকার। পাতি বাংলায় যাকে বলা হয়--- ঠেলাগাড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন